তাজা খবর প্রতিবেদকঃ
নরসিংদীর মাধবদী থানা এলাকায় মাদক ব্যবসা ও সেবন ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। চাইলেই হাতের নাগালে পৌঁছে যাচ্ছে গাঁজা, মদ, ইয়াবা, হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য
মাদকের এ ভয়াবহ ছোবলে যুব সমাজ বিপথগামী হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন। এদিকে গত ১ জুন মাধবদী থানার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এ থানায় মাদকের মামলা হয়েছে ১১টি। এ সময়ের মধ্যে মাধবদী থানা পুলিশ ১৩ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সা
জা দেওয়া হয়েছে ৬ জনকে।
গত ১৭ জুন ২০ পিস ফেনসিডিলসহ পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মহসিন মিয়া নামে এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ আটক করে। ১৩ জুন মাধবদী হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল এলাকা থেকে ২৫ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয় মো. লিটন নামে আরেক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে। ২ জুন মাধবদী থানা এলাকার আটপাইকা থেকে ৩০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ইউসুফ মিয়া নামে এক শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে ডিবি পুলিশ।
এর কয়েকদিন আগে মাধবদী ফায়ার সার্ভিস এলাকা থেকে ৫০০ পিস ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী শাহজাহানকে আটক করে পুলিশ।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, মাদক ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রভাবশালী। তারা রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। মাধবদী পৌরসভা, নুরালাপুর, কাঁঠালিয়া, মহিষাশুড়া, মেহেরপাড়া, পাঁচদোনা, আমদিয়া, পাইকারচর ও চরদিঘলদী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকা এখন মাদকে সয়লাব। এ ছাড়াও আড়াইহাজার,ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও বাঞ্ছারামপুর এলাকা থেকে মাদকের বড় বড় চালান ট্রেন, বাসসহ বিভিন্ন উপায়ে মাধবদীতে ঢুকছে। ডিলারদের আস্তানা থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে মাদক।
এদিকে নেশার টাকা জোগাতে এলাকায় বাড়ছে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক ব্যবসায়ী জানান, এখন আর আগের দিন নেই। ঘরে বা দোকানে রেখে ক্রেতাদের এনে খাতির করে মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে হয় না। প্রথমত, কাস্টমার মোবাইলে তার চাহিদামতো মালের অর্ডার দেয়। কখনও মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে তার চাহিদা জানিয়ে দেয়। পরে কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে মাদক সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতি অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। পুলিশের নাগালের বাইরে গিয়ে সহজেই মাদক সরবরাহ করা হয়।
মাধবদী পৌর এলাকার বাসিন্দা ওসমান ভূঁইয়া বলেন, যে হারে মাদকের বিস্তার ঘটছে, তাতে যুব সমাজকে নিয়ে অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। খড়িয়া এলাকার সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্তমানে স্কুল-কলেজ, কলকারখানাসহ সর্বত্র মাদকের বিস্তার ঘটেছে। তাই মাদক নির্মূলে আইন প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসীসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
গত ১ জুন নরসিংদীর মাধবদী থানার কার্যক্রম শুরু করা হয়। ওইদিন নরসিংদীর পুলিশ সুপার আমেনা বেগম ও মাধবদী থানার ওসি মো. ইলিয়াছ মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
থানার ওসি মো. ইলিয়াছ অনলাইন প্রতিকা তাজা খবর ২৪ ডট কমকে জানান, মাধবদী থানা এলাকার মাদক ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের তালিকা তৈরি করার কাজ এরই মধ্যে শুরু করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারী ও তাদের আশ্রয়দাতাদের আটক করার জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদ কামাল বলেন, মাদক একটি পরিবারই শুধু নয়, গোটা সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। তাই মাদক থেকে যুব সমাজকে দূরে রাখতে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন