মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

রায়পুরায় সমাজসেবা কর্মকর্তাকে হুমকি দিয়ে আবারও আলোচনায় সাদেক চেয়ারম্যান কথা মতো কাজ না করলে হাত-পা ভেঙ্গে ফেলব


স্টাফ রিপোর্টার:
রায়পুরায় অবৈধ নির্দেশ না মানায় এবার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে হাত-পা ভেঙ্গে ফেলার হুমকি দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল সাদেক। গত রবিবার দুপুরে উপজেলার মরজাল কাজি মো. বশির উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে অযৌক্তিক দাবী না রাখায় তিনি এই হুমকি দেন। এই ঘটনায় ভীত উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রেদোয়ান হোসেন ছুটিতে গেছেন।
আবদুল সাদেক উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে সমালোচিত হওয়া এই নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন।
বিদ্যালয়ের নির্বাচন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, আগামী ২১ জুলাই মরজাল কাজি মো. বশির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন। তফসিল অনুযায়ী গত মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা
নেয়া হয়। এতে অভিভাবক প্রতিনিধি (পুরুষ) পদে ৮ জন ও অভিভাবক প্রতিনিধি (মহিলা) পদে ৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। গত রবিবার ছিল মনোনয়নপত্র বাছাই।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রেদোয়ান হোসেন নির্বাচনের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। তিনি নিজ কার্যালয়ে রবিবার বেলা ২টার দিকে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করার সময় আসেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল সাদেক। তিনি প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রেদোয়ান হোসেনকে অভিভাবক প্রতিনিধি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মজিবুর রহমান, আমিনুল হক ও রাশেদুল হকের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে বাতিল করার নির্দেশ দেন। কিন্তু বিধি অনুযায়ী তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তা বাতিল করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এতেই তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও নির্বাচনের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা রেদোয়ান হোসেন গ্রামীণ দর্পণকে বলেন, আবদুল সাদেকের অযৌক্তিক দাবী না রাখায় তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। ওই সময় তিনি বলেন, ‘আমার কথায় রায়পুরা চলে। কি করবেন না করবেন জানি না। এই ৩টা প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে আমার প্রার্থীদের জিতিয়ে আনবেন। কথা মতো কাজ না করলে হাত-পা ভেঙ্গে ফেলব। রায়পুরায় কিভাবে চাকরি করবে দেখে দিব। একেবারে বৃন্দাবনে পাঠাইয়া দিমু।
তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাকে এভাবে কেউ যা ইচ্ছা তা বলে যাবে আর কেউ প্রতিবাদ করবে না তা সত্যিই দুঃখজনক। একের পর এক মানুষকে হুমকি দিলেও কোন বিচার না হওয়ায় ওনার নিকট সবাই অসহায় হয়ে পড়েছে।
ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা অভিভাবক প্রতিনিধি প্রার্থী গাফফার খাঁন বলেন, আমরা প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারি নি। হঠাৎ করেই সাদেক ভাই উত্তেজিত হয়ে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে চরমভাবে গালিগালাজ করে। ওই সময় তিনি কথা না শুনলে অফিস ভেঙ্গে ফেলার হুমকিও দেন। উনার চিৎকার চেচামিচিতে উপজেলার অনেক লোকজন জমে যায়।
এই ব্যাপারে জানতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল সাদেকের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয় নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল মতিন বলেন, রবিবার বিকেলে সমাজসেবা কর্মকর্তার মনটা খারাপ দেখেছি কিন্তু তিনি ঘটনা খুলে বলে নি। এরই মধ্যে তিনি ছুটি নিয়েছেন। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। আগামী বৃহস্পতিবার সবাইকে নিয়ে বসে এই ব্যাপারে কি করণীয় তা ঠিক করা হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন