রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬

নরসিংদীতে ট্রেনের কয়েক হাজার যাত্রীর জন্য বরাদ্দ মাত্র ৭৫টি টিকেট যাত্রী দুর্ভোগ চরমে ॥ আরো আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির দাবি



                                                                            স্টাফ রিপোর্টার:
 সকাল ৯টায় নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে হাজারো যাত্রীর ভীড়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবি, ব্যবসায়িসহ বিভিন্ন পেশার যাত্রী অপেক্ষা করছে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী এগারসিন্ধুর প্রভাতী ট্রেনের জন্য। কাউন্টারের সামনে টিকেটের জন্য লম্বা লাইন। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, বিপুল সংখ্যক যাত্রীর জন্য নেই কোন আসন বরাদ্দ।
Pic- 01
শুধু এগারসিন্ধুর নয়, একই অবস্থা যাত্রাবিরতি করা অধিকাংশ ট্রেনের। এ স্টেশনে প্রতিদিন কয়েক হাজার লোক যাতায়াত করলেও তাদের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৭৫টি টিকেট। ফলে দাঁড়িয়ে গাধাগাধি করে ট্রেন ভ্রমণ করায় নরসিংদীর যাত্রীদের দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনা নিত্যদিনের সঙ্গী। যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধি করতে নরসিংদী স্টেশনে সকল আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি নরসিংদীবাসীর।
জানা যায়, রাজধানী ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা নরসিংদী। এ জেলা শিল্প, বাণিজ্য, কৃষির জন্য খ্যাত। কিন্তু নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে রয়েছে মাত্র ৪টি আন্তনগর ট্রেন কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, এগারসিন্ধুর, মহানগর ও চট্টলা এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতি। কিন্তু নোয়াখালীর অনেক লোক নরসিংদীতে বসবাস করলেও এখানে নেই নোয়াখালীগামী উপকূল এক্সপ্রেস এর স্টপেজ। সিলেটের সাথে নরসিংদীর বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও নরসিংদীতে নেই সিলেট-ঢাকা রুটের চলাচলকারী কালনী, উপবন ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতী। নেই বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতীসহ অন্যান্য আন্তনগর ট্রেনের
যাত্রাবিরতি।
Pic- 02
রেলওয়ে সূত্র জানায়, নরসিংদী রেল স্টেশনে বর্তমানে ১৪টি ট্রেন যাওয়া-আসার সময় যাত্রাবিরতি করে। গত ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে এই স্টেশন থেকে ৩ লাখ ১৬ হাজার ৮৫৪ জন যাত্রী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণ করে। যা থেকে রেলওয়ের আয় হয়েছে এক কোটি ৮৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৩০ টাকা। তবে চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসেই গত বছরের চেয়ে বেশী যাত্রী ভ্রমণ করেছে। তার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে আয়। ইতিমধ্যে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৯৫৪ জন যাত্রী ভ্রমণ করায় টিকেট বিক্রি বাবদ রেলওয়ের আয় হয়েছে এক কোটি ৮২ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪২ টাকা।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছে, গত ৮ জানুয়ারি থেকে টঙ্গী-ভৈরব দ্বৈত লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে কোনো রকম ক্রসিং ছাড়াই ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করায় যাত্রার সময় কমে এসেছে। ফলে সড়ক পথে যানজট এড়িয়ে দ্রুত ভ্রমণের জন্য নরসিংদীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে রেলপথ। এ কারণে নরসিংদী রেল স্টেশনে বেড়েছে যাত্রী ও আয়। তবে ট্রেনের ভিতরে টিকেট কাঁটার সুযোগ থাকায় রেলওয়ের হিসেবের চেয়েও আরও অনেক বেশি যাত্রী এই স্টেশন দিয়ে ভ্রমণ করে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিদিন নরসিংদী থেকে অনেক শিক্ষার্থী ঢাকার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করে পড়াশুনা করে। তাদেরই একজন রাজিব মিয়া বলেন, নিরাপদ, স্বল্প ব্যয় ও কম সময়ের কারণে অনেক ছাত্র-ছাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করে। কিন্তু যাত্রীর তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা কম ও টিকেট না পাওয়ায় আসা-যাওয়া উভয় সময়েই ট্রেনে উঠতে লড়াই করতে হয়। এ কারণে অনেক ছাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াত না করে বাসে ভ্রমণ করছে।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের নরসিংদী শাখার ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ঢাকা থেকে বিপুল সংখ্যক লোক নরসিংদীতে যাতায়াত করে চাকুরি করে। কিন্তু সকালে এগারসিন্ধুর ট্রেন ছাড়া আর কোন ট্রেন না থাকায় প্রায়ই আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। অথচ মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি নরসিংদী যাত্রাবিরতী দিলে অফিসগামী লোকদের দুর্ভোগ অনেকটাই লাঘব হতো।
নরসিংদী স্টেশনে কথা হয় শহরের উপজেলা মোড় এলাকার ব্যবসায়ি আব্দুল মোতালেব রিপনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাসের চেয়ে ট্রেনের যাত্রা নিরাপদ। পাশাপাশি দ্বৈত লাইনের কারণে যাত্রার সময় কমায় ট্রেনের যাত্রা জনপ্রিয় হয়েছে। কিন্তু বিকেলে ঢাকা থেকে ফেরার কোন ট্রেন না থাকায় আমাদেরকে কষ্ট পোহাতে হয়। তাই ঝুঁকি নিয়ে নরসিংদীর যাত্রীরা উপকূল ট্রেনের চেইন টেনে স্টেশনের আউটারে নামে। অথচ উপকূল ট্রেনের যাত্রাবিরতী দেয়া হলে সেই কষ্ট অনেকটাই লাঘব হতো।
এসব দিক বিবেচনা করে দীর্ঘদিন ধরে নরসিংদী রেল স্টেশনে সকল আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধির দাবীতে আন্দোলন করছে বিভিন্ন নাগরিক-সামাজিক সংগঠন। নরসিংদী চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, উন্নত দেশগুলোতে রাজধানীর সঙ্গে পাশ্ববর্তী শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেই বিষয়টি গুরুত্ব না দেয়ায় রাজধানীর উপর প্রতিনিয়ত লোকসংখ্যার চাপ বাড়ছে। নরসিংদী রাজধানীর পাশ্ববর্তী জেলার পাশাপাশি শিল্প সমৃদ্ধ। তাই এখানে আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতী ও টিকেটের সংখ্যা বৃদ্ধি করলে নিরাপদ ভ্রমণের জন্য ট্রেনের যাত্রী উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
নরসিংদীর একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ি বলেন, কয়েক হাজার যাত্রীর জন্য বরাদ্দ মাত্র ৭৫ টিকেট, এটা খুবই অমানবিক। এর মাধ্যমে রেল কর্তৃপক্ষ নরসিংদীবাসীর প্রতি অন্যায়-অবিচার করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণ এবং আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতী বৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের জোরালো ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।
নরসিংদী স্টেশন মাস্টার মহিদুর রহমান বলেন, দ্বৈত লাইন চালু হওয়ার পর পূর্বের চেয়ে নরসিংদীতে ট্রেন যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সম্প্রতি যাত্রী চাহিদার কথা বিবেচনা করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট নরসিংদী স্টেশনে ট্রেনের যাত্রাবিরতী ও আসন সংখ্যা বৃদ্ধির আবেদন করা হয়েছে। এতে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারবে পাশাপাশি রেলওয়ের আয় বাড়বে।
এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাহ্ উদ্দিন গ্রামীণ দর্পণকে বলেন, ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা হিসেবে নরসিংদীতে রেলের প্রচুর যাত্রী রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করে কমিউনিটি ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পাশাপাশি আন্তনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতী বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন