তাজুল
ইসলাম (হানিফ):- তোমাকে
পাওয়ার জন্যে, হে
স্বাধীনতা, তোমাকে
পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
কবি শামসুর রাহমান এর মতো আমারও বলতে ইচ্ছা করে
“তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে বাংলাদেশ, তোমাকে পাওয়ার জন্যে লক্ষ-লক্ষ তাজা প্রাণ ঝড়ে
গেছে, পঙ্গুত্ববরণ করেছে আমার ভাই, মা-বোনদের সমভ্রমহানি করেছে ঐ হানাদার
বাহিনীরদল, মেধাশুন্য করেছে জাতিকে।
একটি রাষ্ট্র জন্ম নিতে গিয়ে তাঁর ৩০ লক্ষ
মানুষের জীবনদান, ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি, লক্ষ-লক্ষ বাড়ীঘর পুড়িয়ে ছাই,
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রায় বিশ হাজার সৈনিকের আত্নদান, অন্যান্য বিদেশী রাষ্ট্রের
মানুষেরও আত্নহুদি ও পঙ্গুত্ববরণ !
বিশ্বের ইতিহাসে এত দাম দিয়ে কেনা হয়েছে কী ? কোন
রাষ্ট্র !
শুধুই কী এক সাগর রক্ত দিয়েছি আমরা !
পাকিস্তানিরা,
২৫ই মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটের নামে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ড চালিয়ে
এই দেশের ঘুমন্ত বাঙ্গালীদের উপর চালায় রাইফেল। শান্তিপ্রিয় মানুষকে পাখির মতো
গুলি করে হত্যা করে ।
প্রাদেশিক পুর্ব পাকিস্তান রাজ্যের রাস্তাঘাট,
ব্রিজ, কালভার্ট, ধবংস করে দেয়।
১৪ই ডিসেম্বরে
এই ভূখণ্ডের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবিদের হত্যার মাধ্যমে জাতিকে
মেধাশুন্য করে। হুমায়ন আজাদের কবিতায় ফুটে উঠেছিল শহীদদের লাশের
ভার।
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?
তেমন যোগ্য সমাধি কই ?
মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো
অথবা সুনীল-সাগর-জল-
সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই !
তাইতো রাখি না এ লাশ আজ
মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,
হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।
তেমন যোগ্য সমাধি কই ?
মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো
অথবা সুনীল-সাগর-জল-
সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই !
তাইতো রাখি না এ লাশ আজ
মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,
হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।
একটি নির্দিষ্ট ভু-খণ্ডের জাতি রাষ্ট্রের কিংবা
প্রাদেশিক রাজ্যের মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি করে দেয় ঐ পাক-হানাদারের দল। যার
প্রেক্ষিতে এই দেশে গড়ে উঠে দেশবিরোধী, রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটি এবং
অন্যদিকে এই জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান “ফ্রীডম ফাইটার”। মোটাদাগে চিন্তা করলে হাতেগুনা কিছু রাজাকার,
আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির লোক ছাড়া সবাই মুক্তিযুদ্ধা।
আর এই জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তানরা বেছে নিয়েছিলেন
যথার্থ বিপ্লবীর জীবন। যে জীবন ভোগের নয়, নয় কোনো বিলাসীর, ছিল শুধুই ত্যাগের। মুক্তিযোদ্ধাদের
অনেকের জীবন-প্রদীপ-ই হয়তো নিভে গেছে, কিন্তু সত্যিকার অর্থেই কী মৃর্ত্যু হয়েছে ?
তাঁদের মৃর্ত্যু হয়নি। সিপিবির নেতা
মোজাহিদুল ইসলাম সেলিমের মতে, মহৎ আদর্শ এবং মহৎ জীবনের কোনো মৃর্ত্যু নেই। তাঁরা তো জগতের চিরঞ্জীব। তাঁদের রক্তে
পতাকা সমাজ প্রগতির লড়াইয়ে বিপ্লবীর জীবনের আহ্বান উদ্দিপ্ত করে চলেছে। বিপ্লবী
কর্মীদের ছড়িয়ে পড়েছে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে। এক বীরশ্রেষ্ঠর রক্ত
থেকে লাখো সৈনিক জন্ম হয়েছে। অজানা এই বিপ্লবীরাই ইতিহাসের প্রকৃত নির্মাতা। তাই
জানতে হবে ইতিহাসের নির্মাতা এসব মহাবীরদের কথা।
আমি, অনার্সের “স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের
ইতিহাস” পড়াতে গিয়ে যে বৈষম্য খুঁজে পাই, পুর্ব ও পচ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে তা
রিতিমত আমার শরীরের পশম-ই দাড়ায় না ! আমাকে প্রচন্ডভাবে আহতও করে, ভাবলেই হ্রদয়ের রক্তহরণ শুরু হয়ে যায়।
যেখানে, ৫৬% লোকের বসবাস পূর্বপাকিস্তান, অন্যদিকে ৪৪% চার রাজ্য মিলে পচ্চিম পাকিস্তান। অথচ সামরিক, বেসামরিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক,
রাজনৈতিক, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও অন্যান্য
ক্ষেত্রে প্রকটভাবে বৈষম্য ছিল খুব দৃশ্যমান। যে বৈষম্যের শিকার ছিল আমার এই মায়া-মাখা ভূ-খণ্ডটি।
তাই বলছি, এত দাম দিয়ে কেনা একটি রাষ্ট্র কী শুধুই মার্চ কিংবা ডিসেম্বর মাসেই
শ্রদ্ধা-সম্মান জানাবে ? পুরো বছর জুড়ে থাকবে নিস্তব্দতা ? কিংবা নতুন প্রজন্মের
কাছে পৌছবে কী এই দামের মর্মার্থ ? হৃদয়াঙ্গম করবে কি স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য !
প্রকৃতপক্ষে, ১৯৭১ এর ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার
সূচনা, আর ১৬ই ডিসেম্বের তাঁর পরিপূর্ণতা
। আর এই পরিপূর্ণতার মাধ্যমে দূর হয়েছে দাস সুলভ মানসিকতা, বৈষম্যের অবসান। পেয়েছি
আমরা এক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র।
কিন্তু আমাদেরও বুঝতে হবে, পাকিস্তানী
মতাদর্শে বিশ্বাসীরাই সর্বকালের
সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির জনককে হত্যা করে, হত্যা করে তাঁর পুরোপরিবার ও
বংশধরদের এবং জাতীয় চার নেতাকে।
আমি যখন দেখি, জাহানারা ইমাম কিংবা তোফায়েল আহমেদ
এর মতো মানুষরা কাভার্ডভেনে করে জেল খানায় যায়, অন্যদিকে নিজামী মুজাহিদরা
এম.পি-মন্ত্রী হয়ে গাড়ীতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে জাতীয় স্নৃতিসৌধে যায় ফুল দিতে, বাহ
! কী সেলুকাস ছিল এই রাষ্ট্র ! তাই না !
আজ আমাদের
আত্মজিজ্ঞাসা করা উচিত,
আমরা কি পেরেছি শহীদ মুক্তিযুদ্ধাদের রক্তের
যথাযথ মূল্য দিতে ? রক্তের দামে
অর্জিত স্বাধীনতার মানহানি আমরা চাই না। আমাদের
ভৌগোলিক স্বাধীনতার সঙ্গে আমরা চাই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, ধর্মীয়
স্বাধীনতা,
কলমের স্বাধীনতা। অন্যথায় এ স্বাধীনতা কখনো পূর্ণতা পাবে না। যে জাতি এত বেশীই দাম
দিয়েছে স্বাধীনতায়, সে জাতিকে নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি। আর সেই জাতিকে দমিয়ে
রাখা যাবে না, যাবে না, যাবে না। শুধুই ষোল কোটি মানুষের দেশে একজন উচ্চশিক্ষিত, দূরদর্শী, ক্যারেস্মেটিক, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ,
কর্মচঞ্চলতা, নীতিতে অটল থাকা, সঠিক চিন্তা গ্রহণ, ভিশন ও মোটিভেশন থাকা, নিপুণতা,
সমস্যার সমাধান করতে পারা একজন রাষ্ট্রনায়ক
দরকার। আর তাহলেই, দক্ষ্যনেতার নেতৃত্বে, সততা ও
স্বচ্ছতায় জাতি খুঁজে
পাবে স্বপ্নের ভবিষ্যৎ
।।
সবশেষে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর কথায় বলে যেতে চাই...
ও আমার দেশের
মাটি, তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা।
তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা ॥
তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা ॥
লেখক :
মোঃ
তাজুল ইসলাম (হানিফ) ,
বিএসএস (অনার্স), এমএসএস (রা.বি), এলএল.বি।
শিক্ষক---- সৈয়দাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয় (অনার্স কলেজ), সৈয়দাবাদ, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ।
শিক্ষক---- সৈয়দাবাদ আদর্শ মহাবিদ্যালয় (অনার্স কলেজ), সৈয়দাবাদ, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন