বাইজিদ আহম্মেদ, পলাশ সংবাদদাতাঃ
নরসিংদী জেলায় বাঁশ ও বেতের তৈরি হস্তশিল্প বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে শত শত দক্ষ গ্রামীণ কারুশিল্পীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এক সময় নরসিংদী জেলা হস্তশিল্পে বেশ সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্য ছিল। এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারুশিল্পী ছিলেন, যারা বংশ পরম্পরায় এই পেশায় জড়িত ছিলেন। তাদের তৈরি পণ্যের গুণগতমান মান খুব ভালো ছিল। কিন্তু বাজারে আকর্ষণীয় নকশার প্লাস্টিক সামগ্রী সহজলভ্য হওয়ায় বাঁশের তৈরি হস্তশিল্পের চাহিদা একদম কমে যায়। ঐতিহ্যবাহী সেই হস্তশিল্পের আবারো জাগরণ ঘটছে নরসিংদীতে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাঁশ-বেত দিয়ে তারা মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা তাদের তৈরি পণ্য কিনে নিয়ে যান। এ কাজে তাদের বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণ নেই। বড়দের দেখেই ছোটরা কাজ শিখে নিচ্ছে। তবে আধুনিক প্রশিক্ষণ পেলে তারা আরো অনেক ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করতে পারতেন। জেলার পলাশ, শিবপুর , বেলাব ও রায়পুরা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বাঁশের তৈরি এসব হস্ত শিল্প তৈরি করা হয়। সরেজমিনে পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গৃহিণীরা বাঁশের শলা দিয়ে কুলা তৈরিতে অনেকটা ব্যস্ত সময় পার করছে। কথা হয় সূচিত্রা রায় নামে এক গৃহিণীর সাথে তিনি জানান, বংশ পরম্পরায় এই পেষায়। দিনের ৫ থেকে ৬ ঘন্টা সময় দিতে হয় কুলা তৈরির কাজে। সংসারের জাবতীয় সব খরচ এই কুলা বিক্রির মধ্যে দিয়ে আসে। তিনি আরো জানান, একটি বড় আঁকারের বাঁশের শলা দিয়ে ৪০টি কুলা তৈরি করা যায়। প্রতিটি কুলা বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। সপ্তাহ শেষে প্রায় ৩ হাজার টাকার মত উর্পাজন হয় হচ্ছে তার। অপরদিকে জেলার শিবপুর উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম খৈনকুট। নানাদিক থেকে পিছিয়ে থাকা এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বিশেষ দুই শতাধিক পরিবার। দীর্ঘদিন ধরেই এসব পরিবার পেশা পরিবর্তন না করে বাঁশ-বেতের পণ্য তৈরি করে আসছে। নানা অসুবিধা সত্ত্বেও হাতে তৈরি এসব পণ্য বিক্রি করেই বেঁচে আছেন তারা। কথা হয় খৈনকুট গ্রামের মোতালিব মিয়ার সঙ্গে। আগে তিনি তাঁতের কাজ করতেন। কিন্তু তাঁতশিল্পে সংকট দেখা দিলে এ কাজ ছাড়তে বাধ্য হন। এর পর প্রায় ২০ বছর ধরে বাঁশ ও বেতের কাজ করছেন। তিনি বলেন, এখন এ দিয়েই সংসার চলে। পরিবারের সবাই কমবেশি এর সঙ্গে যুক্ত। একই এলাকার মোস্তাফা মিয়া জানান, আমরা বাঁশ ও বেত দিয়ে বেলা, পুরা, ঝুড়ি, টুকরিসহ প্রায় ৪/৫ প্রকারের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তৈরি করে থাকি। আমরা আমাদের পরিবারের বড়দের কাছ থেকে এই কাজ দেখে দেখে শিখেছি।
এ ব্যাপারে বিসিক ও কুটির শিল্পবিষয়ক নরসিংদী জেলা কর্মকর্তা মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, বাঁশ ও বেতের তৈরি হস্তশিল্প জেলার চাহিদা পূরণ করে সিলেট, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, ডেমড়া, নারায়নগঞ্জ জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ ও ঋন সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন