রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে নরসিংদীতে সাড়ে ১৮ ঘন্টার অভিযান সমাপ্ত



নজরুল ইসলাম, নরসিংদী প্রতিনিধিঃ
: অবশেষে কথিত জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে র‌্যাব-১১’র সাড়ে ১৮ ঘন্টার জঙ্গি বিরোধী নরসিংদীর অভিযান।
গত শনিবার বিকেল ৪ টায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে র‌্যাব-১১’র জোয়ানরা নরসিংদীর গাবতলী উত্তরপাড়ার বিদেশ প্রবাসী মঈন উদ্দিন আহমেদের বাড়ি ঘেরাও করে। সাড়ে ১৮ ঘন্টার এই অভিযানে কোন অস্ত্র বা গোলাবারুদ উদ্ধার করতে পারে নি র‌্যাব। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাড়িটির ভিতরে থাকা সন্দেহভাজন ৫ জন ছাত্র শিক্ষক আত্মীয়-স্বজন ও মোবাইল যোগাযোগের মাধ্যমে র‌্যাবের নিকট আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকারী আবু জাফর, মাসুুদুর রহমান, মশিউর রহমান, বাছিরুল ইসলাম ও সালাহ উদ্দিনের জঙ্গি সম্পৃক্ততা সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিছুই জানা যায় নি। আত্মসমর্পণের পর র‌্যাব তাদেরকে আটক করে নারায়ণগঞ্জ র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এর আগে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং’র পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদেরকে জানান, বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে বিশেষ করে সিলেটের আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানা থেকে ধৃত জঙ্গিদের দেয়া তথ্য সূত্র ধরে সালাহ উদ্দিনের জঙ্গি সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যায় এবং এস
বের ভিত্তিতেই বাড়িটিতে নজরদারী চালানো হয় এবং সব শেষে নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতেই বাড়িটি ঘেরাও করা হয়। অভিযানের প্রাপ্তি বা অর্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা বাড়িটির একটি কক্ষে তল্লাশী চালিয়েছি। এই কক্ষে আমরা কিছুই পাই নি। আরো ২টি কক্ষ বাকী রয়েছে। এই কক্ষ দুটি তালাবদ্ধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সেখানে অনুসন্ধান চালানো হবে। এখানে বোমা ডিসপোজাল টিম রাখা হয়েছে। তারা ওই কক্ষগুলোতে অনুসন্ধান চালাবে।  আমরা এই বাড়িটির মালিক দুবাই প্রবাসী মঈন উদ্দিন আহমেদ, তার ভাই কেয়ারটেকার জাকারিয়া এবং এই বাড়ি থেকে আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তিদের সাথে জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধান করা হবে। পরে এসব জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধান সম্পর্কিত তথ্যাদি সাংবাদিকদেরকে জানানো হবে।
এদিকে আত্মসর্পণকারীদের সম্পর্কে জানা গেছে আবু জাফর নরসিংদী সদর উপজেলার চরভাসানিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার ছেলে এবং নরসিংদী সরকারি কলেজের ছাত্র। একই কলজের ছাত্র বাছিরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারের নুরুল ইসলাম মোল্লার পুত্র। মাসুদুর রহমানের বাড়ি গাজীপুরের বোর্ডবাজারে। তার পিতার নাম আব্দুল মজিদ মিয়া। সে জামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসার ১০ শ্রেণির ছাত্র। সে ওই বাড়ির ভাড়াটিয়া আবু জাফরের নিকট ইংরেজি বিষয়ে প্রাইভেট পড়তো। সালাহ উদ্দিন ঢাকা বিশ্ববিাদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। মশিউর রহমান নরসিংদী সরকারি কলেজের ছাত্র। গত শনিবার রাতে তারা সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছিল তারা পড়াশুনা করে। তারা জঙ্গি নয়। জঙ্গিদের সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে তারা আত্মসমর্পন করবে। পরে তারা আত্মীয়-স্বজনের সহযোগিতায় রবিবার সকালে র‌্যাবের নিকট আত্মসমর্পণ করে।
মঈন উদ্দিন আহম্মেদের বাড়িটি সম্পর্কে এলাকাবাসী জানিয়েছে, বাড়িটি নির্মাণ করার পর দুবাই প্রবাসী মঈন উদ্দিন আহমেদ একজন মহিলাকে বাড়িটি ভাড়া দিয়েছিল। এই মহিলা একটি কুকুর পালন করতো। কুকুরটি ছিল শিকারী ধরণের। সারাদিন শুধু ঘেউ ঘেউ করতো। এই কুকুরের ভয়ে আশেপাশের কেউ এই বাড়িতে যেতে সাহস পেতো না। এই সুযোগে মহিলা এ বাড়িতে বেপরোয়াভাবে অসামাজিক কার্যকলাপ চালাতো। এই ঘটনা জানাজানি হবার পর এলাকার লোকজন ঘটনাটি দুবাই প্রবাসী মঈন উদ্দিন আহমেদকে অবগত করে। পরে মাস তিনেক পূর্বে তিনি দেশে ফিরে ওই ভাড়াটে মহিলাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে দেয়। গত ৩ মে আবু জাফর এই বাড়িটিতে নতুন ভাড়াটিয়া হিসেবে প্রবেশ করে। এই বাড়িতে থেকে আবু জাফর নিজে লেখাপড়া করতো এবং পাশাপাশি টিউশনি করতো। এই সূত্রেই লোকজন এই বাড়িতে যাওয়া আসা করার সুযোগ পায়। পরবর্তীতে অন্যান্যরা আবু জাফরের সাথে এই বাড়ির ভাড়াটিয়া হিসেবে যোগ হয়। এদের জঙ্গি সম্পৃক্ততা সম্পর্কে এলাকার জনগণ কোনো তথ্য দিতে পারে নি।
উল্লেখ্য যে, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গত শনিবার বিকেল ৪টায় র‌্যাব ১১’র জোয়ানরা বাড়িটি ঘেরাও করার পর এলাকায় ব্যাপক আতংকের সৃষ্টি হয়। আশেপাশের বসবাসকারী বাড়ি ঘরের লোকজন আতংকে জড়োসরো হয়ে পড়ে। এ খবর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হবার পর ঘটনাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। রাত ১০টা নাগাদ র‌্যাব ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। একই সময়ে স্থানীয় প্রশাসন বাড়িটির আশেপাশে ১৪৪ ধারা জারি করেন।
নরসিংদী পুলিশ, ডিবি, ফায়ার সার্ভিস, মেডিকেল টিম, সিআইডি ঢাকাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে যে, গভীর রাতে বাড়িটিতে অভিযান চালানো হবে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে র‌্যাব-১১’র অধিনায়ক লে: কর্ণেল কামরুল হাসান ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। পরে র‌্যাব’র আরো উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে যান। এরই মধ্যে বাড়িটির ভিতরে থাকা সন্দেহভাজন  লোকজন  তাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ করে। আত্মীয়-স্বজন সাংবাদিক ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে আত্মসর্ম্পণের ঘোষণা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব-১১ রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় তাদের আত্মসমর্পনের ব্যবস্থা করে। পরে র‌্যাব জোয়ানদের কঠোর প্রহরায় একজন একজন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন