শনিবার, ৬ মে, ২০১৭

নরসিংদীতে জুতা হাতে নেতাদের ধাওয়া করলেন যুবলীগ চেয়ারম্যান



নরসিংদী সংবাদদাতাঃ
নরসিংদীতে জুতা হাতে নেতাদের ধাওয়া করলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। ওই সময় তিনি জেলার মন্ত্রী-এমপিদের অশ্লীল ভাষায় গাল মন্দ করেছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী নিশ্চিত করেছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর ভেলানগর জেলখানার মোড় বাসস্ট্যান্ডে এই ঘটনা ঘটে।
দীর্ঘ ১৪ বছর পর রবিবার নরসিংদী জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের দুইদিন আগে কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতার বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রশ্নের মুখে ফেলেছে আয়োজনকে। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়,
কেন্দ্রীয় নেতৃৃবৃন্দকে উপেক্ষা করে সম্মেলনের আগেই পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতিক) নিজের বলয়ের এমপিদের নিয়ে পছন্দের নেতাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে বাঁছাই করায় ক্ষুদ্ধ হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতারা। যার ফলশ্রুতিতে শুক্রবারের সন্ধ্যার এই প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন যুবলীগের চেয়ারম্যান।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদসহ কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মী অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলন শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় যুবলীগের চেয়ারম্যান দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী শহরের ভেলানগর জেলখানা মোড় এলাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে অর্ভ্যত্থনা জানাতে জেলা যুবলীগের নেতারা প্রস্তুতি নেয়। এ সময় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ গোস্তামী ও জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজসহ শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় মনোহরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খাঁন বীরু ঢাকায় যাওয়ার পথে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের দেখে তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী নেতা-কর্মীরা জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের গাড়িবহর জেলখানা মোড় অতিক্রম করার সময় যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে অর্ভ্যত্থনা জানাতে এগিয়ে যায়। ওই সময় যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী জুতা হাতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি নেতা-কর্মীদের গালমন্দ করতে করতে জুতা হাতে তাদের ধাওয়া দেন। ওই সময় যুবলীগের চেয়ারম্যান স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিদের অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন। এই ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন নেতা-কর্মীরা। তারা চারদিকে ছুটাছুটি শুরু করেন।
ঘটনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনোহরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খাঁন বীরু বলেন, আমি ঢাকায় যাওয়ার পথে নেতা-কর্মীদের দেখে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু অনাকাক্সিখতভাবে যুবলীগের চেয়ারম্যান বিজয় দাকে গালিগালাজ করে। এ রকম পরিস্থিতি দেখে দূরে সরে যাই। এ রকম পরিস্থিতি জীবনে কখনো পড়েনি। তবে অনর্থক মুখ দিয়ে এই গালিগালাজ আসবেনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, রবিবার অনুষ্ঠিত যুবলীগের সম্মেলনে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু একতরফা ভাবে নিজের পছন্দের নেতা বিজয় কৃষ্ণ গোস্তামীকে সভাপতি ও শামীম নেওয়াজকে সাধারণ সম্পাদক করার প্রস্তুতি সেরেছেন। আর এই প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মীদের মতামত না নেয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। যার ফলশ্রুতিতে যুবলীগের চেয়ারম্যান এই ক্ষুদ্ধ  প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন।
এইদিকে নির্ভরযোগ্য এই সূত্র জানিয়েছে, যুবলীগের চেয়ারম্যানের এই প্রতিক্রিয়ার প্রভাব পড়বে রবিবার অনুষ্ঠিত জেলা যুবলীগের সম্মেলনে। সম্মেলন নিয়ে বিতর্ক তৈরী হওয়ায় অনেক অতিথি সম্মেলনে যোগ দেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সম্মেলন ও নতুন কমিটি নিয়ে জটিলতা তৈরী হলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবেনা।
এই ব্যাপারে জানতে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ গোস্তামীর ব্যবহৃত মোবাইলে কল করলে তিনি এই ব্যাপারে কথা বলতে চাননি।
জেলা যুবলীগের সভাপতি একরামুল ইসলাম বলেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান মৌলভীবাজার যাওয়ার সময় আমরা অভ্যর্থনা জানালে তিনি সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু আসার সময় কেন এমন ঘটনা ঘটলো তা আমার জানা নেই।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন