ময়লা আবর্জনা,
শিল্প কারখানার দূষিত ক্যামিকেল বর্জ্যসহ প্রায় সব ধরণের বর্জ্য ফেলে
শীতলক্ষ্যা নদীর পানিকে প্রতিনিয়ত দূষিত করা হচ্ছে। যেন এসব বিষয়ে দেখার
কেউ নেই। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ ২২ মার্চ বুধবার পালিত হচ্ছে
আন্তর্জাতিক বিশ্ব পানি দিবস। ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি যে, পানির আর এক নাম
‘জীবন’। বর্তমানে আজ পলাশের বিভিন্ন খাল, বিল এবং বিশেষ করে শীতলক্ষ্যা
নদী, বা আশপাশে অবস্থিত প্রায় সবগুলো জলাশয়ের পানির বীভৎস রং ও দুষণের
ভয়াবহ অবস্থা দেখে মনে হয় পানির নাম জীবন না হয়ে ‘মরণ’ হওয়াটা উচিত ছিল।
বিশেষ করে এখন যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় শীতলক্ষ্যা নদীর পানির দশা কি? এই
প্রশ্নের জবাবে সবাই হয়তো আমার উত্তরের সঙ্গে একমত হবেন পৃথিবীর কোনো
দেশের খাল,বিল, নদ-নদীর পানি মনে হয় এর চেয়ে দূষিত হতে পারে না। প্রতিনিয়ত নদী ভরাট করে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে, ময়লা আবর্জনা ফেলে,
শিল্পকারখানার দূষিত ক্যামিকেল বর্জ্য, গৃহস্থালিয় বর্জ্যসহ প্রায় সব ধরণের
দুষিত বর্জ্য ফেলে এই নদীর পানিকে আমরা যেভাবে দূষিত করছি তার যথাযথ
প্রতিকার ও নজরদারী করার প্রয়োজন। বৃষ্টি হলে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌরসভায়
অবস্থিত ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও নতুন বাজার এলাকায় জলাবন্ধতার
সৃষ্টি হয়। এসব জলাবন্ধতার প্রধান কারণ মানচিত্র থেকে একের পর এক জলাশয়
গুলো হারিয়ে যাওয়া। প্রতিনিয়ত নদীর এই পানি কল-কারখনার সৃষ্ট দূষণের কবলে
এর ঘনত্ব এত বেড়েছে এবং এর রং এমন বীভৎস কালো ও সবুজ রূপ ধারণ করেছে যে
দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা তো দুরের কথা, এতে বসবাসকৃত কোন জলজপ্রাণী ও মৎস
বেঁচে থাকতে পারবে কি না এ ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। দূষিত
এই পানি দিয়ে কৃষিতে সেচ কাজে ব্যবহার, গোসল করা, দৈনন্দিন গৃহস্থালি
কাজকর্ম করা একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। বর্তমানে শীতলক্ষ্যা নদীর পানির
এই বেহাল দশার কারণে পলাশে বা গাজীপুরে বসবাসকৃত প্রতিটি মানুষকে এখন
বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট অনুভব করতে হচ্ছে। এই নদীতে পূর্বে যারা গোসল
করতেন তারা বলেন, খুবই দুঃখ হয়, শীতলক্ষ্যা নৌপথে ভ্রমনের সময় অন্তরে যদি
কারো সাধ জাগে এক আচঁলা পানি হাতে নেবে বা পানিতে পা ডোবাবে বা নদীর পানিতে
একটু গাঁ ভেজাবে সেই আশাও এখন গুড়েবালি। কেননা এই পানি হাতে বা শরীরে
লাগলে ভয়াবহ চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনায়ই বেশি বিরাজ করে।
পলাশ বাজার ঘাটে নৌকার মাঝি আবদুল হাকিম মিয়া বলেন, দীর্ঘ ২৬ বছর যাবত এই
ঘাটে নৌকা চলাই। কিন্তু পূর্বে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি এত দূষিত ছিল না।
পানির এখন যেই অবস্থা তাতে নৌকা চালাতেও ভয় করে। বাঁচাও শীতলক্ষ্যা নদী
আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহবুব সৈয়দ বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে ওঠা
শিল্পকারখানার দূষিত বর্জ্যে ও দখলে নদীর পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে।
শিল্পায়নের নামে নদী দখলের ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব ঘটনা বিন্দু বিন্দু করে
সঞ্চিত হয়ে দেশের নদ-নদীর জন্য ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে। আজ থেকে ৫০ বছর পরের
চাহিদা ও বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে নদ-নদীর পানি রক্ষা করতে হবে। আজকের
আন্তর্জাতিক পানি দিবসে এসব নদী রক্ষা করাই হোক আমাদের মূল প্রতিপাদ্য।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন