পলাশ প্রতিনিধিঃ
আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমেধ্যই রাজনীতির মাঠে নরে চরে বসছে ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আর এই নির্বাচনে দলের সিনিয়র নেতাদের নজর কাড়তে সম্ভাব্য প্রার্থীরা গত রমজানের ঈদ থেকেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুশল বিনিময় আর বিভিন্ন বাজারের দোকানে দোকানে গিয়ে লোকজনের সাথে কুশল বিনিময় শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু দলীয় অবস্থান শক্তিশালী করনের দিকে তেমন নজর নেই কারো। তাই এবার ক্ষমতাসীন দলের সম্ভাব্য প্রার্থী কে হবেন এই নিয়ে অনেকটা সংশয়ে রয়েছেন শিবপুরের সাধারন নেতাকর্মী থেকে শুরু করে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরাও।
এরমধ্যে নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনটি একটি। এই আসনটি ১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির সাবেক মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূইয়ার দখলে ছিলো।
তারপর নির্বাচনের মাধ্যমে উদ্ধার করেন জহিরুল হক ভূইয়া মোহন। কিন্তু গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় নৌকা প্রতিক পেলেও দল থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় পরাজয় মেনে নিতে হলো জহিরুল হক ভূইয়া মোহনকে।
অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়লাভের পর এই আসনটি পাকাপোক্ত করার জন্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা প্রতিনিয়ত কাজ করে গেলেও দলীয় নেতৃবৃন্দের ভাষায় দলকে ঘোচাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। আর বিগত নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচন না করায় বিএনপির একটি শক্তিশালী গ্রæপকে সাথে নিয়ে কাজ করার ফলে তাঁর জয়লাভ সহজতর হয়ে উঠে। কিন্তু এবার সেই ঐক্যে ফাটল ধরেছে। যারফলে শিবপুরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন টুকরো টুকরো হয়ে ব্যক্তি কেন্দ্রীক গ্রুপে পরিনত হয়েছে।
এরমধ্যে বর্তমান এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা আছেন যুবলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে, আর সাবেক এমপি জহিরুল হক ভূইয়া মোহন তাঁর পুরনো ইমেজকে কাজে লাগিয়ে সাধারন মানুষকে সাথে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অপরদিকে তারই এক সময়ের ডান হস্ত বলে এলাকায় পরিচিত জন শিবপুর সরকারী শহীদ আসাদ কলেজের সাবেক ভিপি ও শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ছাত্রনেতা হিসেবে মনোনয়নের আশায় তাঁর একটি অংশ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন সামসুল আলম ভূইয়া রাখিল।
দলের সকলেই যখন আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকেট পেতে মরিয়া হয়ে কাজ করছেন সেই মুহুর্তে বাদ পড়তে রাজি নয় শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ খান। যেহেতু তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাঁরও একটি দলীয় প্রভাব রয়েছে, সেই চিন্তায় তিনিও দলের প্রতিক নিয়ে নির্বাচনের প্রার্থী হয়ে আগামী সংসদে নির্বাচন করবেন বলে প্রচারনা চালাচ্ছেন।
শিবপুর উপজেলা পর্যায়ের সিনিয়র নেতারা যখন দলের মনোনয়ন নিয়ে ব্যস্ত তখন দলের সাংগঠনিক অবস্থান ভুলতে বসেছে দলের সিনিয়র নেতারা। এই অবস্থায় শিবুপরের সাধারন নেতাকর্মীরা দলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের এই অবস্থা দেখে এমন একজনকে বেছে নিতে চান যারা দলকে শক্তিশালী করবে দলের সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করবে। আর এরজন্য যদি উপজেলার বাইরে যেতে হয় তাই করতে হবে দলের চিন্তা করে। এর উদাহরন হিসেবে অনেকেই দেখছেন নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের দিকে। বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খানকে পরাজিত করে পলাশে প্রথম নৌকার বিজয় অর্জন করেন ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাঁর নেতৃত্বে সমস্ত উপজেলায় ওয়ার্ড থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যন্ত দলকে ঢেলে সাজিয়েছেন। ফলে দলটি একটি শক্তিশালী অবস্থানে পরিনত করেছেন। ফলে তাদের ভাষায় এখন নৌকা ছাড়া যে কেউ এখান থেকে প্রার্থী হয়ে আসুক না কেনো বিজয় নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন। পরবর্তীতে দশম সংষদ নির্বাচনে নরসিংদী-২ পলাশে দলীয় ঐক্যের কারনে ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ মনোনয়ন না পাওয়ায় তারই ভাই ব্যবসায়ী কামরুল আশরাফ খান পোটন স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। এরপর সমস্ত পলাশ উপজেলায় তাদের একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরী হয়। এই থেকে শিক্ষা গ্রহনের জন্য শিবপুরের সাধারন নেতাকর্মীরা পলাশের পোটনকেই বেছে নিতে আগ্রহী। কামরুল আশরাফ খান পোটন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর খুব কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন পাশাপাশি গত বছর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি পদে নির্বাচন করে সারা দেশে একটি পরিচিত লাভ করেছেন। তাই তাকে শিবপুর থেকে নির্বাচিত করা হলে একদিকে দল শক্তিশালী হবে, অন্যদিকে এলাকার উন্নয়ন হবে, পাশাপাশি সাধারন নেতাকর্মীরা পাবে উপযুক্ত মূল্যায়ন। শিবুপর উপজেলার একাধিক নেতাকর্মীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আগামী নির্বাচনে নরসিংদী-৩ শিবপুর আসনে কামরুল আশরাফ খান পোটনকে দেওয়া হলে এই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘরে নেয়া সহজতর হবে। এর পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন বৃদ্ধি পাবে, সাথে সাথে উন্নয়নের গতিও বৃদ্ধি পাবে।
কথা প্রসঙ্গে কামরুল আশরাফ খান পোটন সাংবাদিকদের জানান, আমি আওয়ামী লীগ করি। শেখ হাসিনা আমার নেত্রী। তাই আগামী নির্বাচনে আমার নেত্রী যা বলবে আমি তাই করবো। নেত্রীর কথার বাইরে আমি কোনো কাজ করবোনা। নেত্রী আমাকে যেখান থেকেই মেনোনয়ন দেবেন, আমি সেখান থেকেই নির্বাচন করবো। এটা হতে পারে পলাশ, নরসিংদী সদর, শিবপুর কিংবা ঢাকাতেও। আমি এখনো জানিনা নেত্রী আমাকে কোথায় থেকে মনোনয়ন দেবেন। নেত্রী আমাকে যেখান থেকেই মনোনয়ন দেবেন, সেখানেই আমি নির্বাচন করে জয়লাভের পর দলকে শক্তিশালী করবো পাশাপাশি এলাকার উন্নয়ন করবো। আমি কোথায় থেকে নির্বাচন করবো সেটা সময়ই বলে দেবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন