পরে আজ সোমবার সকালে ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এলাকায় লাশ নেওয়া হয়। সন্ত্রাসীদের ভীতি উপেক্ষা করে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহিমকে (৩৪) চোখের জলে শেষ বিদায় জানাতে আসেন হাজারো গ্রামবাসী। সেখানে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। অবশেষে দুপুরে জানাজা শেষে আবদুর রহিমকে তাঁর নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত রায়পুরা থানায় মামলা রুজু হয়নি।
নিহত আবদুর রহিম রায়পুরা উপজেলার চানপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
গত ৮ জুলাই ঈদের পর দিন বেলা ১১টায় রায়পুরার চানপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন রাজুর সমর্থক ও রাজুবিরোধী আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আবদুর
রহিম নিহত ও কমপক্ষে ১৫ জন আওয়ামী লীগ কর্মী আহত হন। দুই শতাধিক ঘরবাড়ির মালামাল লুট করা হয়।
আহতদের মধ্যে নিহত রহিমের বাবা নাজিম উদ্দিন (৬৫), শহিদ মিয়া (৫৫), রিপা (১৩) ও তাজুল ইসলামকে (৪৮) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার পর বাবুল বাহিনী এলাকা দখল করে নিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদির জিলানী পক্ষের পাঁচ-ছয়শ নেতাকর্মী গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে গেছে। প্রতিপক্ষকে তাড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাবুল তার বাহিনী নিয়ে জিলানী পক্ষের নেতাকর্মীদের ঘরবাড়িতে অবাধে লুটপাট চালাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চানপুর ইউনিয়ন পরিষদের স্থগিত নির্বাচন নিয়ে রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল কাদির জিলানীর পক্ষ ও চানপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। সেখানে এমপি রাজুর সমর্থক বাবুল মিয়াকে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বাবুল মিয়াকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে মেনে নিচ্ছেন না। তাঁরা চাচ্ছেন আবদুল কাদির জিলানীকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করলে ঈদের আগের দিন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের সঙ্গে আবদুল কাদির জিলানীর কথাকাটাকাটি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাবুল বাহিনীর কয়েক শ লাঠিয়াল ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী ঈদের পর দিন শুক্রবার বেলা ১১টায় জিলানীর ভাগ্নে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহিমের বাড়িতে টেটা-বল্লম, লাঠিসোটা ও ককটেল নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। বাবুল বহিনীর হামলায় আবদুর রহিম টেটাবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। এ সময় তাঁর বাবা নাজিম উদ্দিন ও অন্যরা ছুটে এলে হামলাকারীরা তাঁদেরও বেধম মারপিট করে। অতর্কিত হামলায় টিকতে না পেরে জিলানীর সমর্থকরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পরে বাবুল বাহিনী তাদের ঘরবাড়িতে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী অবাধে লুটপাট চালায়। মুমূর্ষু অবস্থায় আবদুর রহিমকে প্রথমে রায়পুরার তুলাতলীতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববার ভোর রাতে আবদুর রহিম মারা যান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়।
পাল্টা হামলার আশঙ্কায় বাবুল বাহিনীর শত শত লাঠিয়াল ও সন্ত্রাসী কালিকাপুর গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক সন্ত্রাসী মহড়া শুরু করে। রোববার সকালেও বাবুল বাহিনী জিলানী সমর্থক মাওলা মেম্বারের বাড়ি দখল করে লুটপাট চালায়। পরে বাবুল বাহিনী আবদুর রহিমের লাশ যাতে এলাকায় আনতে না পারে এ জন্য কালিকাপুর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় পাহারা বসায়। সন্ত্রাসীরা নিহতের লাশ কেড়ে নেওয়ার অপেক্ষায় ওত পেতে বসে থাকে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য নেই। ঘটনার দিন ৮ জুলাই শুক্রবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও বাবুলের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করে তাঁর নিজস্ব স্পিডবোট দিয়ে আবার রায়পুরায় চলে আসে। এরপর তারা আর এলাকায় যায়নি।
এদিকে আবদুর রহিমের মৃত্যুর খবরের পরও পুলিশ সৃষ্ট উত্তেজনা প্রশমনে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এলাকার লোকজন জানিয়েছে, বাবুল বাহিনীর নেতা বাবুল মিয়া রায়পুরার এমপি সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজুর সমর্থক বিধায় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে সাহস পাচ্ছে না।
হামলার ব্যাপারে বাবুল মিয়ার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন