বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০১৭

ঈদকে ঘিরে ক্রেতা বিক্রেতায় মুখর নরসিংদীর বাবুর হাট



নরসিংদী সংবাদদাতাঃ
দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের বাজার নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাটে পুরোদমে জমে উঠেছে ঈদের কেনাবেঁচা। ঈদ উপলক্ষে দোকানে দোকানে দেশীয় তৈরি নতুন কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন কাপড় ব্যবসায়ীরা। রমজান শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই সপ্তাহের প্রতি শুক্র থেকে রবিবার পর্যন্ত দেশের নানা প্রান্তের পাইকারি ও খুচরা ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে দেশীয় কাপড়ের এই বাজারটি।
জানা যায়, নরসিংদী শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে সদর উপজেলার শীলমান্দি ইউনিয়নে অবস্থিত দেশের অন্যতম প্রধান পাইকারি কাপড়ের বাজার বাবুরহাট। ১৯৩৪ সালে জমিদার হলধর সাহা প্রায় ১১ একর জমির উপর হাটটি প্রতিষ্ঠা করে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাবুরহাট দেশব্যাপি খ্যাতি অর্জন করে

সরেজমিনে নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাটে গিয়ে দেখা যায় ঈদকে ঘিরে পাইকারি কাপড়ের বাজারে বেড়েছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততা। ব্যবসায়ী ছাড়াও পাইকারি দরে যাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি কেনার জন্য আগে ভাগেই আসছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততোই বাড়ছে পাইকারি ক্রেতার ভিড়। শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, থান কাপড়, পাঞ্জাবির কাপড়, গামছা, বিছানার চাদরসহ প্রায় সব ধরনের দেশীয় কাপড় পাওয়া যায় এখানে। ঈদ উপলক্ষে বাজারের ছোট বড় প্রায় তিন হাজার দোকানে সব ধরনের কাপড়ের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খুচরা কাপড় বিক্রেতারা ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরই দোকানে নতুন কাপড়ের পসরা সাজাতে রোজার শুরুতেই আসেন শেখেরচর-বাবুরহাটে। দেশের অন্যতম শাড়ি, লুঙ্গি ও অন্যান্য দেশীয় বস্ত্র কারখানাগুলো নরসিংদী কেন্দ্রিক। তাই এসব বস্ত্র কোম্পানিগুলোর প্রধান শো-রুমে রয়েছে বাবুরহাটে। এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ও ন্যায্য দামে চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের দেশীয় কাপড় পাওয়ায় পাইকারি ক্রেতাদের আগ্রহের কমতি নেই এই হাটকে ঘিরে। সপ্তাহের শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত রাজশাহী, বগুড়া, সিলেট, ফেনী, বরিশাল, পিরোজপুর, জামালপুর, ভোলা, সিরাজগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠছে বাজারটি। বাজারের প্রতিটি অলি-গলিতে হাটের দিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে পাইকারি কাপড় বিক্রি। কেনা শেষ হলে শ্রমিকরা কাপড়ের গাইট বেঁধে তুলে দিচ্ছেন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে রাখা ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে। প্রতিদিন এখান থেকে পাঁচ শতাধিক ট্রাক বোঝাই কাপড় যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলাতে।
দীর্ঘবছর ধরে বাবুরহাটে আসছেন কুড়িগ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী হিরা মিয়া। তিনি বলেন, নিরাপদ পরিবেশ ও এক স্থানে সকল কাপড় পাওয়া যাওয়ায় আমরা এই হাটে আসি। এখান থেকে কাপড় নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ব্যবসা করছি। এবারের ঈদের মৌসুমও তার ব্যতিক্রম নয়। রোজার প্রথম দিকে নেওয়া চালানের কাপড় প্রায় শেষ কিন্তু ঈদের এখনো বাকী। তাই আবার কাপড় কিনতে হাটে এসেছি।
বাবুরহাট বাজারের লুঙ্গি ও শাড়ির পাইকারি বিক্রেতা আমানত শাহ গ্রæপের চেয়ারম্যান আলহাজ হেলাল উদ্দিন বলেন, ঈদ উপলক্ষে শাড়ি-থ্রি পিসসহ নতুন নতুন ডিজাইনের যাবতীয় কাপড় তোলা হয়েছে দোকানগুলোতে।
পাকিজা শাড়ি কালেকশনের ম্যানেজার আলমগীর হোসেন বলেন, ঈদ উপলক্ষে থ্রি-পিস ও শাড়িতে নতুনত্ব আনা হয়েছে। দেশের অন্যান্য বাজারের তুলনায় দাম কম ও কাপড়ের মান ভালো হওয়ায় সারাদেশের পাইকারি ক্রেতারা ঈদের কাপড় কিনতে এই হাটে আসেন।
বাজারের বোখারী লুঙ্গির স্বত্তাধিকারী আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বছরের দু’টি ঈদেই মূলত বেশি বেঁচা-কেনা হয় বাবুরহাটে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতরে যাকাতের জন্য লুঙ্গি ও শাড়ির চাহিদা বেড়ে যায়। বিগত কয়েক বছর দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এবার বেঁচাকেনা মোটামুটি ভাল হচ্ছে।
নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিল্প এলাকা নরসিংদীর হৃদপিণ্ড হলো বাবুরহাটই। পুরো জেলার ব্যবসায়ীরাই তাকিয়ে রয়েছে বাবুহাটের ঈদ বেচাকেনার দিকে। কারণ বেচাকেনা ভাল হলেই ভাল থাকবে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত জেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন