পলাশ সংবাদদাতাঃ
বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে অবস্থিত বাংলাদেশ জুট মিলে টানা তিন সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে শ্রমিকদের মজুরি।
সেই সাথে মিলের উৎপাদিত প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের অবিক্রীত পাটজাত পণ্য পড়ে আছে মিলের গুদাম ঘরে। পণ্য বিক্রি না হওয়ায় অর্থ সংকটে পড়তে হচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষকে। বাংলাদেশ জুট মিলের পণ্য বিক্রি করে থাকে বিজেএমসি। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি বাবদ বিজেএমসির কাছে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা পায় বাংলাদেশ জুট মিল। কিন্তু
বিজেএমসি সময়মত টাকা না দেয়ার কারণে শ্রমিকদের বেতন ভাতাদি দিতে পারছেন না মিল কর্তৃপক্ষ। বেতন ভাতাদি না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে মিলের চার হাজার শ্রমিক কর্মচারীদের । মিলের শ্রমিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা সপ্তাহে মাত্র ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মজুরি পান। কিন্তু একাধিক সপ্তাহের মজুরি বকেয়া থাকায় তাদের আর্থিক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। সাংসারিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য টাকা নেই তাদের কাছে। দোকানিরাও এখন আর বাকিতে পণ্য দিতে চান না। এ কারণে অর্থকষ্টে দিশাহারা হয়ে পড়ছেন অধিকাংশ শ্রমিকরা। অনেকে মজুরি না পেয়ে মিলে আসছেন না। তারা বিকল্প অর্থসংস্থানের উৎস হিসেবে বাজার বন্দরে কাজ করে অথবা রিকশা-ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।
মিলের সিবিএ সভাপতি ইউসুফ আলী ও সাধারণ সম্পাদক আক্তারুজ্জামান জানান, ৫২০ তাঁতের এই জুট মিলটিতে প্রায় চার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত আছেন। এক সময় বাংলাদেশ জুট মিলটি দেশের অন্যতম লাভজনক জুট মিল ছিল। কিন্তু বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারণে মিলটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। বিজেএমসি টাকা না দেয়ায় মিল কর্তৃপক্ষ তিন সপ্তাহ যাবত শ্রমিকদের মজুরি ও এক মাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতাদি দিতে পারছেন না। অপরদিকে মিলের বিদ্যুৎ বিল প্রায় ৬০ লাখ টাকা ও গ্যাস বিল ৭ লাখ টাকা বকেয়া জমে গেছে। বকেয়া পরিশোধ না করার কারণে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বার বার বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করার নোটিশ দিচ্ছে। ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গত ৬ বছর যাবত মিলের চাকরিচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচ্যুইটির টাকাও দিতে পারছেন না মিল কর্তৃপক্ষ। এ পর্যন্ত মিলে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচ্যুইটির প্রায় ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ জুট মিলের কাছে সরবরাহ করা পাটের জন্য পাট ব্যবসায়ীদের প্রায় ২২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
এদিকে মিলটির উৎপাদন বিভাগ থেকে জানা যায়, মিলের উৎপাদিত প্রায় ৫০ কোটি টাকার পাটজাত পণ্য মজুদ রয়েছে। এসব পণ্য সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় আর্থিক সংকটে পড়েছে মিল কর্তৃপক্ষ। আর এ কারণে শ্রমিকদের মজুরি প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। ফলে বকেয়া মজুরির পরিমাণ বাড়ছে। নিয়মিত মজুরি প্রদান করতে না পারায় দেখা দিচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষ।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ জুটমিলের মহা ব্যবস্থাপক গোলম রাব্বানীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বিজেএমসির অনুমতি ব্যতীত কথা বলতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন