শনিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৭

( নরসিংদী-২ আসন) আ’লীগের গলার কাঁটা জাসদ ঘাঁটি ফিরে পেতে চায় বিএনপি

বাইজিদ আহাম্মেদ, পলাশ নরসিংদী 
একাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে নরসিংদী-২ (পলাশ) আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন। দেশের বড় দু’টি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সারা দেশের মতো পলাশ আসনেও তাদের নিজ নিজ অবস্থান গড়তে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সভা-সেমিনার, সদস্য ফরম বিতরণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারণার মধ্য দিয়ে চলছে রাজনৈতিক কার্যক্রম। অপর দিকে বিএনপি স্বল্প পরিসরে সভা-সমাবেশ ও সদস্য সংগ্রহ করলেও এই দিক দিয়ে জাতীয় পার্টি রয়েছে অনেকটা পিছিয়ে।
আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা জাসদ : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় দেশে সরকার গঠন করলেও
পলাশ আসনে বিজয়ের মুখ দেখেনি। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বরাবরই ড. আবদুল মঈন খান এ আসন থেকে নির্বাচনে জয়ী হয়ে এমপি ও মন্ত্রিত্ব লাভ করেন। সে সময়কার পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম হাসানুল হক হাসান, ঘোড়াশালের মিয়া পরিবারের সন্তান খায়রুল কবির ও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার নুরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে পরাজিত হন। দীর্ঘ পরাজয়ের গ্লানি এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে ২০০৪ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপকে সভাপতি নির্বাচিত করে পলাশের তৃণমূল আওয়ামী লীগ। তখন থেকেই পাল্টে যায় রাজনৈতিক চিত্র। সভাপতি ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ রাজনৈতিক বিচণতায় খুব অল্পসময়ে আওয়ামী লীগের দুর্বল সংগঠনকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে আসেন। যার প্রতিফলন হিসেবে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মতো বিএনপির ঘাঁটিতে ড. আবদুল মঈন খানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে বিজয় অর্জিত হয়। এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ দেখে স্বার্থকতার মুখ। এরপর আর থেমে যায়নি আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থী দিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র আসনটিও অর্জন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে মহাজোট থেকে নৌকা প্রতীকে জাসদ নেতা জায়েদুল কবিরকে মনোনয়ন দিলে অনেকটা বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। সে সময় সভাপতি, আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান ধরে রাখার জন্য তার আপন ছোট ভাই কামরুল আশরাফ খান পোটনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে মহাজোটের প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্যের পদটি আবার দখলে নেয়। দশম নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে দলীয় মনোনয়ন নেয়া জাসদ নেতা জায়েদুল কবিরের পক্ষে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী কাজ করলেও দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মীই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। সে সময় যেসব নেতাকর্মী স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নেন, তাদের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগ থেকে বিতারিত। আগামী একাদশ নির্বাচনে মহাজোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে পলাশ আসনে আবার দলীয় মনোনয়ন নিতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এই আসনে গত এক বছরে জাসদ থেকে কয়েকটি সভা-সমাবেশও করা হয়। জাসদের এসব প্রচারণা আওয়ামী লীগের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বেশির ভাগ নেতাকর্মী।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নেতা জায়েদুল কবির বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনে মহাজোট থেকে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলেও, এমপি পরিবারের চাপে নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আমার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। তবে একাদশ নির্বাচনে হবে ভিন্ন চিত্র।
এ দিকে পলাশ আসনের বর্তমান এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটন আগামী নির্বাচনে তার বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপকে এ আসন ছেড়ে দেয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, আমি চাই আগামী নির্বাচনের নরসিংদী-২ (পলাশ) আসন থেকে আমার বড় ভাই ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ যেন নির্বাচন করেন।
অন্য দিকে ডা: আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপ জানান, দশম সংসদ নির্বাচনে দল থেকে প্রথমে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলেও পরে সভানেত্রী মহাজোটের শরিক দল জাসদকে এ আসনে মনোনয়ন দেন। সে সময় সভানেত্রীর নির্দেশে আমি এ আসন থেকে সরে পড়ি। এবার পলাশের আসনে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে আমি আশাবাদী।
হিসাব নিকাশ করবে জাতীয় পার্টি : একসময়ে পলাশের রাজনৈতিক মাঠে জাতীয় পার্টি ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। কিন্তু সাংঠগনিক দুর্বলতা ও নেতৃত্বের অভাবে জাতীয় পার্টি এখন তৃতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। পলাশের বেশিল ভাগ নেতাকর্মী ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাথে লিয়াজোঁ করে চলছেন। নবম ও দশম নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নেয়। জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. আবদুল মঈন খানকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের বিজয় অর্জনে জাতীয় পার্টি বিরাট ভূমিকা পালন করে।
পলাশ উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক জাকির হোসেন মৃধা বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির পলাশের নেতাকর্মীদের অনেকটা কোনঠাসা করে রাখে। দল ক্ষমতায় থাকলেও সেই সময় পলাশের জাতীয় পার্টি কোনো সুযোগ-সুবিধা পায়নি। শরিক দল হিসেবে বিগত সময়ে আমরা আওয়ামী লীগকে কি দিয়েছি আর কি পেয়েছি, তা নিয়ে আমাদের হিসাব নিকাশ রয়েছে। এ
ঘাঁটি ফিরে পেতে চায় বিএনপি : গত ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পলাশে বিএনপির প্রথম পরাজয় হয়। এরপর থেকে একে একে উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরমেয়র ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোও চলে যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কব্জায়। এতে করে ভেঙে পড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল। সেই সাথে মামলা হামলার ভয়ে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়তে হয় বিএনপিকে। নিজেদের ঘাঁটি ফিরে পেতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও দলের নতুন সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে সক্রিয় হচ্ছে উপজেলা বিএনপি।
পলাশ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এরফান আলী জানান, পলাশে এখনো বিএনপির ঘাঁটি রয়েছে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে তার প্রমাণ মিলবে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সারা দেশের মতো পলাশেও বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহের কাজ চলছে। আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে সদস্য সংগ্রহ করছেন। দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে এরফান আলী জানান, পলাশে বিএনপির একক প্রার্থী ড. আবদুল মঈন খান।
বার আমাদের পার্টি থেকে একক প্রার্থী দেয়া হবে। ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান ও কেন্দ্রীয় যুববিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক আবু সাঈদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন