বিশেষ প্রতিনিধিঃ
জীবন থেকে মুছে গেছে সব আনন্দ,এবার মনে হয় মরেই যাবো আর পারি না, ভুকের ভিতরে খুব কষ্ট হয়। মরার আগে একটিই আশা ছিল, ছোট ছেলেটিকে যদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী হিসেবে দেখে যেতে পারতাম,তবে মনে হয় আর হবে না, আমার শরীরের যা অবস্থা তাতে আর পারব বলে মনে হয় না। এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতার স্থান পরিবর্তন করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি তাও হলো না। ৭১ এর রণাঙ্গেনের বীর সৈনিক যিনি মুক্তিযোদ্ধে ৫ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর সালাউদ্দিন এর নেতৃত্বে সুনামগঞ্জ জেলাকে শত্রæমুক্ত করেছেন তার নাম মোঃ লাল মিয়া। ১৯৭১ সালে দেশ মাতৃকার টানে জীবনকে বাজি রেখে মাত্র ২৩
বৎসর বয়সে অস্ত্র হাতে নিয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। দেশকে শত্রæমুক্ত করে বিজয় অর্জন করলেও জীবন যুদ্ধে তিনি আজ পরাজিত। রোগান্ত শরীরের সাথে যুদ্ধ করে কোনরকম ভাবে বেঁচে আছেন। দেশ ¯^াধীন হওয়ার এক বছর পর প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে বাম পাশের একটি হাত ও একটি পা দুর্বল হওয়ায় তিনি আজ প্রতিবন্ধীতায় পরিনত হয়েছেন। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষন শুনে বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে ফেলেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযোদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। দেশ ¯^াধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর ছবি ভুকে নিয়ে নরসিংদীর পলাশে চলে আসেন। তার ঘড়ে গিয়ে দেখা যায় মাটির দেয়ালে খুব যতœ সহকারে টানিয়ে রেখেছেন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিটি। দীর্ঘক্ষন আলাপকালে এই মুক্তিযোদ্ধা জানান, কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়াচর থানার বড়ছয়সুতি গ্রামে ১৯৫১ সালে তার জন্ম। পিতার নাম মোঃ মফিজ উদ্দিন। পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে লাল মিয়া সবার বড়। বাবা ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক। তাই এই পরিবারের কেউ শিক্ষার আলো দেখতে পায়নি। তিনি আরো জানান, ¯^াধীনতার পর পলাশে আসি । এই এলাকার মায়ায় পড়ে গেছি। এখানকার নাগরিক হয়েছি। ভোটও দেই এখান থেকে, কিন্তু কখনো এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা পাইনি। শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছাড়া কপালে আর কিছুই জুটেনি। প্রতিমাসে একহাজার টাকা ভাড়া দিয়ে একটি মাটির ঘড়ে স্ত্রী ও ছোটছেলে রায়হানকে নিয়ে কোনরকম দিনযাপন করছি। প্রতিমাসে ছেলের পড়ালেখার জন্য ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়া নিজের ঔষুধপত্র সহ তিন বেলার আহারের ব্যবস্থাও করতে হয়। অনেক সময় এলাকার বাজারে বাজারে ভিক্ষা করে আহারের ব্যবস্থা করতে হয়। তবে এখন তাও আর সম্ভব না অসুস্থ্য শরীর নিয়ে চলতেই পারি না। কথাগুলো বলতে বলতে লাল মিয়ার দু চোখ দিয়ে জল জড়তে থাকে। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ জেলায় যুদ্ধ করেছি তাই মুক্তিযোদ্ধার নাম ওখানে উঠেছে। এই অসুস্থ্য শরীর নিয়ে ভাতা আনতে আমাকে সুনামগঞ্জ যেতে হয়। ভাতার স্থান পরিবর্তন করার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। সেখানকার মুক্তিযোদ্ধা পরিষদে ২০ হাজার টাকাও খরচ করেছি। কিন্তু কোন সুফল পাইনি। ভাতার স্থানটি পরিবর্তন হলে আমার খুব উপকার হবে। দিনে দিনে আমার শরীরের অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। ছেলের চাকুরী দেখে যেতে পারি কি না জানিনা। সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া ছোট ছেলেটি পড়ালেখা শেষ করে যেন একটি সরকারী চাকুরী পায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন