পলাশ (নরসিংদী) সংবাদদাতাঃ
নরসিংদীর পলাশের পা দিয়ে লিখে সমাপনি পরিক্ষা দেওয়া জন্নাত মেঘলা জিপিএ ৫ পেয়েছে। শনিবার প্রাথমিক সমাপনি পরিক্ষার ফল প্রকাশ হয়। এতে মেঘলা জিপিএ ৫ পাওয়ার খবরে উচ্ছ¡সিত আনন্দের জোয়ার বইছে মেঘার পরিবার ও শিক্ষকদের মধ্যে। ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানা স্কুল এন্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী জান্নাত মেঘলার জন্ম থেকেই দুটি হাত নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দুরে ফেলে দিয়ে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মেঘলা আর দশজন ¯^াভাবীক মানুষের মত নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছে। এরই প্রতিফলন হিসেবে প্রথমবারের মতো শিক্ষা জীবনে অর্জন করল সর্বচ্চো ফলাফল। প্রাথমিক সমাপনি পরিক্ষায় নিচু টেবিলে বসে দু পায়ে খাতা ভাঁজ করে, ডান পায়ে কলম ধরে সাবলীল ভাবে লিখে সবগুলো বিষয়ের পরিক্ষা নির্দিষ্ট
সময়ের আগেই শেষ করে মেঘলা। উপজেলা শিক্ষা অফিসের পক্ষ থেকে মেঘলার পরিক্ষার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করলেও সেই সুযোগ নিতে চায়নি মেঘলা। সে সবার সাথে বসেই পরিক্ষা দেয়।
মেঘলার বাবা রুহুল আমীন জানান, তার পড়াশোনার জন্য কখনো চাপ দিতে হয়না আমাদের। প্রতিদিন নিয়মিত দুই তিন ঘণ্টা পড়ে। বাচ্চাদের সাথে খেলাধূলাও করে। মেঘলা গল্পের বই পড়তে ও ছবি আঁকতে ভালোবাসে। প্রচুর পুরস্কার আছে তার। সে বড় হয়ে যা হতে চায়, তা হতে আমি সবসময় চেষ্টা করবো। তিনি আরো জানান, নিজেকে কখনো প্রতিবন্ধী ভাবে না সে। কিছুদিন আগে পলাশ অডিটরিয়ামে একজন ব্যবসায়ী মেঘলার প্রতিভা ও পড়াশোনার আগ্রহ দেখে ৫০০০ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বক্তব্যে মেঘলাকে প্রতিবন্ধী বলায় সে কেঁদে দিয়েছিল। সে বলেছিল, এই টাকা ফেলে দাও। আমি সবকিছু করতে পারি, প্রতিবন্ধীরা সবকিছু করতে পারে না।
জিপিএ ৫ পেয়ে কেমন লাগছে এই প্রশ্নে মেঘলা জানায়, আমি খুব খুশি। আমার বাবা, মা আর বোনরাও খুব খুশি। সে আরো বলে, আমার কাছে প্রতিবন্ধী শব্দটা ভালো লাগে না। কেউ যখন আমাকে এরকম বলে তখন খুব কষ্ট লাগে। আমি ক্লাসে প্রথম হতে পারি, আবৃত্তিতে প্রথম হতে পারি, চিত্রাংকনে প্রথম হতে পারি তবে আমি কেন প্রতিবন্ধী হব। আমার ঘরে এত এত পুরস্কার তবে কেন আমাকে প্রতিবন্ধী বলা হবে?
বড় হয়ে কি হতে চাও এই প্রশ্নে মেঘলা বলে, আমি আমার বড় বোনের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাই এবং ভবিষ্যতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট হতে চাই।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন