শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৭

নিরব ভূমিকায় প্রশাসন -----পলাশের ডাঙ্গা-কালীগঞ্জ নৌপথে চাঁদাবাজি


পলাশ (নরসিংদী) সংবাদদাতাঃ
নরসিংদীর পলাশের ডাঙ্গা ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ সীমানায় শীতলক্ষ্যা নদী পথে প্রকাশ্যে চলছে মালবাহী নৌযানে চাঁদাবাজি। চাঁদাবাজদের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছেনা ছোটখাটো ট্রলারসহ বড়বড় মালবাহী জাহাজও। প্রতিটি নৌযান থেকে ৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে নৌযানের চালকদের মারধরসহ মালামাল লুটের ঘটনা ঘটছে অহরহ। এদিকে দীর্ঘ দিন ধরে প্রকাশ্যে নৌপথে চাঁদাবাজি হলেও স্থানীয় প্রশাসন রয়েছে নিরব ভূমিকায়। চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ প্রশাসন কোন ভূমিকা রাখছেনা বলে অভিযোগ করেন অধিকাংশ ভুক্তভোগীরা।
জানা যায়, শীতলক্ষ্যা নদীর এই পথ দিয়ে প্রতিদিন শতশত মালবাহি জাহাজ ও ট্রলার চলাচল করছে।
ঘোড়াশাল ও পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা, প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, দেশবন্ধু সুগার মিল,  জনতা জুটমিল, ক্যাপিটাল পেপার মিল, সেভেন রিং সিমেন্টসহ বড়বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান পলাশ ও কালীগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে অবস্থিত। এসব প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ পণ্য ও কাচাঁমাল নৌপথে আনা নেওয়া হয়। চাঁদাবাজদের হামলা ও লুটপাটের শিকার হতে হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠানের নৌযান চালকদের। এছাড়া নৌ পথ দিয়ে আসা বাশ, বালু, পাথরসহ বিভিন্ন মালবাহী ট্রলার আটকিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। পলাশের ডাঙ্গা ও কালীগঞ্জ সীমানায় শীতলক্ষ্যা নদী পথে নিয়মিত যাতায়াতরত কয়েকটি মালবাহী চালকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, কালীগঞ্জের মাছুম নামে এক সন্ত্রাসী তার বাহিনী দিয়ে প্রতিনিয়ত নৌযান আটকিয়ে টাকা আদায় করছে। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার বাহিনীর লোকজন লাঠি ও রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এসবি বিউটি অফ সাকুরা নামে এক জাহাজের সোগানি মফিজুর রহমান জানান, চট্রোগ্রাম থেকে সার নিয়ে ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানায় আসার পথে গত সোমবার সকালে ডাঙ্গা-কালীগঞ্জ সিমানায় পৌছালে পিছন থেকে একটি ট্রলার নিয়ে ১৫ জন যুবক জাহাজে উঠে। পরে তারা জাহাজের স্টাফদের অবরুদ্ধ করে চাঁদা দাবি করে। তাদের মধ্যে একজন বলে উঠে তারা মাছুম ভাইয়ের লোক। এই পথ দিয়ে যেতে হলে তাদের চাঁদা দিয়েই যেতে হবে। আমরা পলাশের এমপি পোটন খানের মাল নিয়ে যাচ্ছি বললে তারা উত্তেজিত হয়ে আমাকে , জাহাজের মাষ্টার ইকবাল হোসেন ও ড্রাইভার আব্দুল সোবাহানকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে তিন হাজার টাকা দিয়ে আমরা ছাড়া পাই।  অপরদিকে আনোয়ার নামে এক ট্রলার চালক জানান, পলাশ থেকে সার নিয়ে মুন্সিগঞ্জে যাওয়ার পথে ডাঙ্গা কালীগঞ্জ সিমানায় প্রায় সময় সন্ত্রাসী মাছুম বাহিনী ট্রলার আটকিয়ে প্রায় সময় টাকা আদায় করে। টাকা নেওয়ার সময় বলে স্থানীয় এমপি ও পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে টাকা আদায় করছি। তারা নাকি এই টাকা থেকে থানার ওসি ও এমপিকে টাকা দেয়।
নাম প্রকাশ না করার সর্থে কালীগঞ্জ ও ডাঙ্গা নৌঘাটের এক মাঝি জানান, মাছুম বাহিনীর ১০ থেকে ১৫ জন লোক কালীগঞ্জ গুদারাঘাটের পাশে ভূমি অফিসে অবস্থান নিয়ে থাকে। দুর থেকে মালবাহি কোন নৌযান এ পথে আসতে দেখলেই ট্রলার নিয়ে হানা দেয়। অনেক সময় নৌযান চালকদের চিৎকার শুনতে পাই। কিন্তু সন্ত্রাসী মাছুমের ভয়ে কেও সাহস করে এগিয়ে আসতে চায় না।
বাংলাদেশে সার আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান পোটন ট্রেডাসের পলাশ শাখার সুপারভাইজার আল আমিন মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে ডাঙ্গা কালীগঞ্জ এলাকায় মাছুম বাহিনীর লোক সারের জাহাজে চাঁদাবাজি করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে পোটন ট্রেডাসের সত্বাধিকারী ও পলাশের এমপি পোটন খান কালীগঞ্জের এমপি মহোদয়ের সাথে আলাপ করেছেন। এব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে মাছুমের বিষয়ে খোজ নিয়ে জানা যায়, গাজীপুর কালীগঞ্জের দড়িসোম এলাকার সফর উদ্দিনের ছেলে মাছুম এলাকায় একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার নামে কালীগঞ্জ থানায় হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সে এলাকার চিহ্নিত কিছু মাদক ব্যবসায়ী নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে তুলে। এই বাহিনীর মাধ্যমে সে নৌযানে চাঁদাবাজিসহ এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ সংঘঠিত করে আসছে। এর মধ্যে সামসুল, সাব্বির, নেয়ামুল তার বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছে। এছাড়া মাছুম বাহিনীর শাহিন, সোহেল, উপল, রিফাত, নাঈম, সজিব, উজ্জল ও তাহের নৌযান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে।
এদিকে নৌপথে চাঁদাবাজির বিষয়ে পলাশ থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ জানান, কালীগঞ্জের কিছু লোক নৌপথে টাকা আদায় করছে। বিষয়টি আমি ওই থানার ওসিকে অবগত করেছি। আমাদের ডাঙ্গার পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যদের দিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধে নৌপথে টহলের ব্যবস্থা করেছি।
অন্যদিকে মাছুম বাহিনীর চাঁদাবাজির বিষয়টি একেবারেই অজানা বলে কালীগঞ্জ থানার ওসি আলম চাঁদ জানান, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নাই। এব্যাপারে থানায় কেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। মাসুমের নামে থানায় মামলা রয়েছে। তাকে মাদক ও পূর্বের একটি মামলার গ্রেফতারি প্ররোয়নায় গত দুইদিন আগে আটক করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন